শুক্রবার
১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>

>

পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা নিয়ে ঢাকা চেম্বারের মতবিনিময়

পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা নিয়ে ঢাকা চেম্বারের মতবিনিময়

0Shares

পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের লক্ষ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লালবাগে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ডিসিসিআই’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, এসএমইখাতে অপর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ডলারের মূল্যের অস্থিরতা, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দীঘসূত্রিতা, উচ্চ সুদ হার, ভ্যাট ও করের হার বৃদ্ধি এবং জটিল রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীর ব্যবসার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলোর আশু সমাধানে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়াও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে বলে আলোচকবৃন্দ মত প্রকাশ করেন।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চীফ ইকোনোমিস্টস ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সেলিম আল মামুন, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ)-এর অতিরিক্ত কমিশনার মানস কুমার বর্মন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মো. জসীম উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা, ব্যবসার আকার, প্রকৃতি ও সক্ষমতা অনুযায়ী করা ব্যবস্থার সহজীকরণ, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা নিরসন, বাস্তবভিত্তিক ভ্যাট হার নির্ধারণের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, শতবছর ধরে পুরোনো ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হলেও যানজট, অবকাঠামোর অপ্রতুলতা এবং কর ও ভ্যাটের প্রতিবন্ধকতার কারণে এখানকার উদ্যোক্তাবৃন্দ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যা নিরসনে সরকাররি-বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য।

ড. মো. সেলিম আল মামুন বলেন, ২০২২-২৪ পযর্ন্ত স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্য ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণে ডলারের মূল্য অস্বাবাভিক হারে বেড়ে যায় এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ৬ মাসে আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গত ৭ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে বলেও তিনি জানান।

মানস কুমার বর্মন বলেন, সরকার ভ্যাট ব্যবস্থা সহজীকরণের জন্য ভ্যাট অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা অটোমেটেড করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানি থেকে মুক্ত হবেন। তিনি রশিদ বিহীন ভ্যাটের টাকা না প্রদানের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ভ্যাট সবসময় নিধারিত হয়ে থাকে মূল্য সংযোজনের ওপর।

মো. জসীম উদ্দিন বলেন, পুরোনো ঢাকার যানজট নিরসনে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়াও আসন্ন রমজান মাসে নগদ টাকা পরিবহনে ব্যবসায়ীদের পুলিশের সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব করেন। যানজট নিরসনে পুরোনো ঢাকার বেশকিছু রাস্তা ওয়ানওয়ে করা হবে তিনি অবহিত করেন। কিশোর গ্যাংকে একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে এটি মোকবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।

ডিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক মনোয়ার হোসেন করের হার কমিয়ে করের আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। সেই সাথে করের হার যৌক্তিকীকরণের ওপর গুরত্বারোপ করেন।

ডিসিসিআই’র সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুস সালাম বলেন, অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিক্রি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এমতাবস্থায় কর ও ভ্যাটের উচ্চ হার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে আমরা ক্রমশ ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছি।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, বর্তমানের অথনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এলসি মার্জিন নূন্যতম ৫০ শতাংশ থেকে হ্রাস করা প্রয়োজন। এছাড়াও অর্থবছরের মাঝে এসআরও জারি করে শুল্কহার পরিবর্তন করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে খাত ভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করা, ট্যাক্স-ভ্যাট ব্যবস্থার সহজীকরণ, যানজট নিরসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন বিশেষ করে কিশোর গ্যাং-এর উৎপাত নিয়ন্ত্রণ, আমদানি পর্যায়ে ট্যারিফ ভ্যালুর ওপর শুল্ক আরোপ, ভ্যাট হার হ্রাস, বন্ড লাইসেন্স-এর আওতায় আমদানিকৃত পণ্যের অপব্যবহার বন্ধ করা, সরকারী ব্যয় হ্রাস এবং বন্দরের পণ্য খালাস প্রক্রিয়া অটোমেটেড ও সহজীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোর দেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান, পরিচালনা পষদের সদস্যবৃন্দ এবং প্রাক্তন সভাপতিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআই’র সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে ডিসিসিআই’র মেম্বারশীপ সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।

সূত্র : বাসস