শুক্রবার
১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বজুড়ে কোন কাজের চাহিদা বাড়বে, কমবে-ই বা কোন কাজের

0Shares

বিশ্বজুড়ে কর্মজগতে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও পরিবর্তনের জেরে সামনের দিনগুলোয় কর্মক্ষেত্রে কেমন পরিবর্তন ঘটবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের আগ্রহ-উত্তেজনা এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে আগামী এক দশকে যেমন অনেক চাকরি চলে যাবে, তেমনি নতুন অনেক কাজও সৃষ্টি হবে।

‘দ্য ফিউচার অব জবস’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে ডব্লিউইএফ বলেছে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও পরিবেশবান্ধব রূপান্তরসহ অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত বদলের কারণে বৈশ্বিক শ্রমবাজার নতুন রূপ নেবে। এসব বড় প্রবণতার কারণে আগামী এক দশকে বিশ্বে ১৭০ মিলিয়ন বা ১৭ কোটি নতুন কর্মসংস্থান হবে।

এই যে নতুন কর্মসংস্থানের কথা বলা হলো, পরিমাণগত দিক থেকে তা বিশ্বের এখনকার মোট ১৪ শতাংশ কাজের সমান। একই সময়ে ৯ কোটি ২০ লাখ লোক প্রচলিত চাকরির জন্য অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বেন। কাটাকাটি করলে দেখা যাচ্ছে, আগামী এক দশকে নিট ৭৮ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৮০ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে।

এখন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সেই সব কাজ করতে কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হবে। ওই প্রতিবেদন প্রণয়নে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) বিশ্বের এক সহস্রাধিক বৃহৎ নিয়োগদাতার ওপর জরিপ করেছে। সংস্থাটি মোট ২২টি শিল্পের এসব নিয়োগদাতার সঙ্গে কাজ করেছে, যেসব শিল্পে বর্তমানে ১৪ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ নিয়োজিত রয়েছেন।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কিছু কিছু কাজের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুত। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক কাজের চাহিদা বাড়ছে। এসব কাজের মধ্যে আছে বিগ ডেটা বিশেষজ্ঞ, আর্থিক প্রযুক্তিবিষয়ক প্রকৌশলী আর এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ।

কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আগামী এক দশকে সবচেয়ে বেশি চাহিদা তৈরি হবে কৃষিশ্রমিক ও মজুরের। চাহিদা বৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে হালকা ট্রাক ডেলিভারি সেবার গাড়ি চালনা। সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট তৃতীয়, ভবন নির্মাণকারী ও সহায়ক  অন্যান্য কাজ চতুর্থ ও দোকানের বিক্রয়কর্মীর কাজ পঞ্চম স্থানে থাকবে। এ ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সহায়ক অন্যান্য পেশা ষষ্ঠ; গাড়ি, ভ্যান ও মোটরসাইকেল চালনা সপ্তম; নার্সিং অষ্টম; খাদ্য ও পানীয় পরিবেশক কার্যক্রম নবম এবং সাধারণ ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা দশম স্থানে থাকবে।

দেখা যাচ্ছে, যেসব কাজের চাহিদা বাড়বে তার মধ্যে অনেকগুলোই অর্থনীতির মৌলিক প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন গাড়িচালক, ভবন নির্মাণকর্মী ইত্যাদি। আর সরবরাহ ও সেবাকর্মীদের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। তাঁদের জন্য এসব সেবার প্রয়োজন হবে।

নিয়োগদাতারা মনে করেন, বর্তমানে কাজের জগতে যত ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ শতাংশের ধরন ২০৩০ সালের মধ্যে বদলে যাবে। ২০২৩ সালে এই হার ছিল আরও বেশি, ৪৪ শতাংশ। ডব্লিউইএফের ‘দ্য ফিউচার অব জবস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নতুন বাস্তবতায় কর্মীদের নিরন্তর শিখনে জোর দিতে হবে; সেই সঙ্গে নতুন ও উচ্চতর দক্ষতা রপ্ত করা শিখতে হবে।

তবে আগামী পাঁচ বছরে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব অন্য যেকোনো দক্ষতা রপ্ত করার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। এই তালিকার শীর্ষে আছে এআই ও বিগ ডেটা। এরপরই রয়েছে নেটওয়ার্ক, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত সাক্ষরতা। এ ছাড়া সৃজনশীল চিন্তা, ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা, নমনীয়তা ও গতিশীলতার গুরুত্বও বাড়বে।

যে ১০টি দক্ষতা রপ্ত করার গুরুত্ব প্রতিদিনই বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো নেতৃত্ব, সামাজিক প্রভাব, মেধা ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণী চিন্তা ও পরিবেশগত নেতৃত্ব।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কর্মীদের নতুন ও উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের বিষয়ে বিনিয়োগ করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সেন্টার ফর দ্য নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যায়তন ও সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী দিনের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা। তারা মনে করে, ভবিষ্যতের শ্রমবাজারে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষতার সঙ্গে সঠিক মানবীয় দক্ষতার মিশেল ঘটাতে হবে।

আগামী ১০ বছরে যেসব কাজের গুরুত্ব কমে যাবে, তার মধ্যে শীর্ষ ১০টি হলো ক্যাশিয়ার ও টিকিট বিক্রয়কারী; প্রশাসনিক সহকারী ও নির্বাহী সচিব; ভবনের তত্ত্বাবধায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী; উপকরণ রেকর্ডিং ও স্টক সংরক্ষক কেরানি; ছাপাখানা ও সহায়ক কর্মী; হিসাবরক্ষণ ও বুক কিপিং, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষক; পরিবহনের সহায়তাকারী; নিরাপত্তা প্রহরী এবং ব্যাংকের এটিএম সেবার কর্মী।

এ ছাড়া করোনা মহামারির পর অনেক কিছুই বদলে গেছে। হোম অফিস তথা বাসায় থেকে কাজ করার প্রবণতা যেমন স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও বিপুল পরিবর্তন এসেছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। আগে একজন উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচিত করা হতো তাঁর পড়াশোনা, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, দক্ষতার প্রমাণ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এসবের ভিত্তিতে। যে প্রার্থীর মধ্যে এসব গুণ বিশেষভাবে উপস্থিত থাকত, তাঁকে চাকরির জন্য মনোনীত করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।

এদিকে বৈশ্বিক গণমাধ্যম বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, উপযুক্ত প্রার্থীর যে পুরোনো ব্যাখ্যা, সেখান থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান বেরিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন দক্ষতার নতুন সূচক খুঁজছে। কিছু ক্ষেত্রে এককভাবে উপযুক্ত প্রার্থী খোঁজার ধারণাই বদলে যাচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যাঁরা রিমোট বা হাইব্রিড কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, তাঁদেরই মনোনয়ন তালিকার ওপরে রাখেন নিয়োগকর্তারা। বলা হচ্ছে, সহানুভূতি, প্রতিক্রিয়াশীলতা, সম্মান ও অন্যের কথা ভালোভাবে শোনার দক্ষতার মতো গুণাবলি অপরিহার্য। আদর্শ প্রার্থীর ক্ষেত্রে অভিযোজন যোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিযোজন যোগ্যতা কোম্পানিগুলোর অস্থিরতার সময় কর্মচারীদের দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে সাহায্য করে বলে ম্যাককিনসের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন

এই সাইটে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।